(দিনাজপুর টোয়েন্টিফোর ডটকম) উত্তরাঞ্চলের প্রাচীন জনপদ দিনাজপুর। এই জেলার সঙ্গে মিশে রয়েছে ইতিহাস-ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির নানা বিষয়। এই জেলাতেই কালের সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে আছে কান্তজীর বা কান্তনগর মন্দির। ঐতিহাসিক কান্তজীর মন্দির দিনাজপুর জেলার কাহারোল উপজেলার সুন্দরপুর ইউনিয়নের কান্তনগর গ্রামে অবস্থিত।
জেলা সদর থেকে ২০ কিলোমিটার উত্তরে দিনাজপুর-তেঁতুলিয়া মহাসড়কের পশ্চিমের নদীটির নাম ঢেঁপা। এই নদীর তীরে কান্তজীর মন্দিরে অবস্থান।
মন্দিরটি একনজর দেখতে দেশ-বিদেশ থেকে ছুটে আসেন হাজারও পর্যটক। স্থানীয় দর্শনার্থীদের পাশাপাশি আশপাশের জেলা থেকে আসা বিভিন্ন বয়সী মানুষের আনাগোনা থাকে বছরজুড়ে।
কান্তজীর মন্দিরের ইতিহাস
মন্দিরের উত্তর দিকের ভিত্তিবেদীর শিলালিপি থেকে জানা যায়, তৎকালীন দিনাজপুরের মহারাজা জমিদার প্রাণনাথ রায় তার শেষ বয়সে মন্দিরের নির্মাণ কাজ শুরু করেন। ১৭২২ খ্রিষ্টাব্দে তার মৃত্যুর পরে তার শেষ ইচ্ছা অনুযায়ী তার পোষ্যপুত্র মহারাজা রামনাথ রায় ১৭৫২ খ্রিষ্টাব্দে মন্দিরটির নির্মাণ কাজ শেষ করেন। শুরুতে মন্দিরের চূড়ার উচ্চতা ছিল ৭০ ফুট। ১৮৯৭ খ্রিষ্টাব্দে মন্দিরটি ভূমিকম্পের কবলে পড়লে এর চূড়াগুলো ভেঙে যায়। বিশ শতকের শুরুর দিকে মহারাজা গিরিজানাথ মন্দিরের ব্যাপক সংস্কার করলেও মন্দিরের চূড়াগুলো আর সংস্কার করা হয়নি।
কান্তনগর মন্দিরের স্থাপত্য সৌন্দর্য
মন্দিরের বাইরের দেয়ালজুড়ে পোড়ামাটির ফলকে রামায়ণ, মহাভারত এবং বিভিন্ন পৌরাণিক কাহিনী চিত্রায়ণ করা আছে। পুরো মন্দিরে প্রায় ১৫ হাজারের মতো টেরাকোটা টালি রয়েছে। উপরের দিকে তিন ধাপে উঠে গেছে মন্দিরটি। মন্দিরের চারদিকের সবগুলো খিলান দিয়েই ভেতরের দেবমূর্তি দেখা যায়। মন্দির প্রাঙ্গণ আয়তাকার হলেও, পাথরের ভিত্তির উপরে দাঁড়ানো ৫০ ফুট উচ্চতার মন্দিরটি বর্গাকার। নিচতলার সব প্রবেশপথে বহু খাঁজযুক্ত খিলান রয়েছে। দুটো ইটের স্তম্ভ দিয়ে খিলানগুলো আলাদা করা হয়েছে, স্তম্ভ দুটো খুবই সুন্দর এবং সমৃদ্ধ অলংকরণযুক্ত। মন্দিরের পশ্চিম দিকের দ্বিতীয় বারান্দা থেকে সিঁড়ি উপরের দিকে উঠে গেছে। মন্দিরের নিচতলায় ২১টি এবং দ্বিতীয় তলায় ২৭টি দরজা-খিলান রয়েছে, তবে তৃতীয় তলায় রয়েছে মাত্র ৩টি করে।
চট্টগ্রাম থেকে কান্তজীর মন্দির দেখতে আসা দর্শনার্থী দিলিপ বলেন, আমি কান্তজীর মন্দিরের নাম অনেক শুনেছি। আজ প্রথম আসা কান্তজীর মন্দিরে। মন্দিরটি দেখে আমার অনেক ভালো লাগল। মন্দিরের দেয়ালে কত সুন্দর কারুকাজ করেছে, যা দেখে মুগ্ধ আমি।
রংপুর থেকে মেলা দেখতে আসা দর্শনার্থী বিথী রানী বলেন, মন্দিরে অনেক বার এসেছি। কিন্তু রাস মেলার সময় আসা হয়নি। রাস মেলা উপলক্ষে এবার প্রথম আসলাম। রাস মেলার সময় মন্দিরে এসে আমাকে অনেক ভালো লাগল।
ঢাকা থেকে মেলা দেখতে আসা দর্শনার্থী তাপস কুন্ডু বলেন, আমি আমার বাবার কাছে কান্তজীর মন্দিরের কথা শুনেছি। কিন্তু মন্দিরের কারুকাজ আজ নিজ চোখে দেখলাম। এক কথায় অসাধারণ। মন্দিরের দেয়ালে এত সুন্দর নকশা হাত দিয়ে করা যায়, তা নিজের চোখে না দেখলে বিশ্বাস করা যাবে না।
যেভাবে যাবেন কান্তজীর মন্দিরে
ঢাকা থেকে দিনাজপুরের দূরত্ব প্রায় ৪১৪ কিলোমিটার। এ দীর্ঘ পথ পাড়ি দেওয়ার জন্য ঢাকার গাবতলী, কল্যাণপুর থেকে রয়েছে বেশ কটি আরামদায়ক কোচ সার্ভিস। কমলাপুর রেলস্টেশন থেকে দিনাজপুর যাওয়ার ট্রেন রয়েছে। সময় বেশি লাগলেও এতে স্বাচ্ছন্দ্যে যাওয়া যায়। দিনাজপুর জেলা সদর থেকে কান্তজীর মন্দিরের দূরত্ব ২০ কিলোমিটার।