রবিবার , ১৬ মার্চ ২০২৫ | ৩রা চৈত্র, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
  1. অন্যান্য
  2. আইন আদালত
  3. আর্ন্তজাতিক
  4. এক্সক্লুসিভ
  5. কৃষি ও কৃষাণ
  6. ক্যাম্পাস
  7. ক্রিকেট
  8. গল্প-সাহিত্য
  9. চাকুরি
  10. জাতীয়
  11. জেলার খবর
  12. টালিউড
  13. টেনিস
  14. তথ্য-প্রযুক্তি
  15. ধর্ম ও ইসলাম

আবরার ফাহাদের মৃত্যু থাই পাহাড়ের মতো ভারী: অ্যাটর্নি জেনারেল

প্রতিবেদক
admin
মার্চ ১৬, ২০২৫ ১০:১৯ পূর্বাহ্ণ

(দিনাজপুর টোয়েন্টিফোর ডটকম) বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদের মৃত্যু আমাদের জাতীয় জীবনে থাই পাহাড়ের মতো ভারী হয়ে আছে বলে মন্তব্য করেছেন অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান। আবরার হত্যা মামলায় ২০ জনকে মৃত্যুদণ্ড ও পাঁচজনের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড বহাল রেখে হাইকোর্টের দেওয়া রায়ের পর সাংবাদিকদের ব্রিফিং দেওয়ার সময় তিনি এ মন্তব্য করেন। অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, এ ধরনের রায়ের মধ্য দিয়ে একটি রাষ্ট্র ও সমাজ ব্যবস্থায় ডিসিপ্লিন আনার জন্য ও ন্যায় বিচার নিশ্চিত করতে বিচার বিভাগের প্রতি যে ধারণা, সে ধারণা প্রতিষ্ঠিত হলো।

তিনি আরও বলেন, আজকের রায়ের মধ্য দিয়ে সমাজে এই বার্তা গেল যে, আপনি যত শক্তিশালীই হোন না কেনো, আপনার পিছে যত শক্তিই থাকুক না কেনো সত্য একদিন প্রতিষ্ঠিত হবে এবং ন্যায় বিচার হবেই।

বুয়েট শিক্ষার্থী আবরারের মৃত্যু প্রসঙ্গে অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, মাও সে তুং এর মতো বলতে হয়, কোনো কোনো মৃত্যু থাই পাহাড়ের মতো ভারী। কোনো কোনো মৃত্যু পাখির পালকের মতো হালকা। আবরার ফাহাদের মৃত্যু আমাদের জাতীয় জীবনে থাই পাহাড়ের মত ভারী হয়ে আছে। আবরার ফাহাদের মৃত্যু গোটা জাতির মূল্যবোধের শেকড়ে নাড়া দিয়েছে।

অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, আবরার ফাহাদের মৃত্যু এটাই প্রতিষ্ঠিত করে দিয়ে গেছে যে ফ্যাসিজম যত শক্তিশালীই হোক মানুষের মনুষ্যত্ববোধ কখনো কখনো জেগে উঠে সকল ফ্যাসিজমকে দুমড়ে-মুচড়ে ভেঙে দিতে পারে।

এদিকে, হাইকোর্টের রায়ের পর আবরার ফাহাদের বাবা মো. বরকত উল্লাহ সাংবাদিকদের বলেন, আজকের রায়ে আমরা আপাতত সন্তুষ্ট। আজ যে রায় হাইকোর্ট দিয়েছে আমরা চাই রায়টা যেন দ্রুত কার্যকর হয়। নিম্ন আদালতে থেকে শুরু করে আজকের রায় পর্যন্ত আমরা সন্তুষ্ট। তবে আমার মতো আর কোনো বাবার বুক যেন এভাবে খালি না হয়। যেসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে র‌্যাগিং আছে, আমরা সে সবের পরিবর্তন চাই। ছাত্ররা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভালোভাবে বসবাস করবে এটা চাই। এ ধরনের ঘটনা যেন আর না ঘটে। আর  আবরারকে এ বছরের স্বাধীনতা পুরস্কারের জন্য মনোনীত করার জন্য সরকারের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাই। এই স্বীকৃতির জন্য আমরা গর্বিত।

আবরার ফাহাদ হত্যা মামলায় বিচারিক আদালতে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্তদের ডেথ রেফারেন্স ও আসামিদের আপিল শুনানি শেষে বিচারপতি এ কে এম আসাদুজ্জামান ও বিচারপতি সৈয়দ এনায়েত হোসেনের সমন্বয়ে গঠিত একটি হাইকোর্ট ডিভিশন বেঞ্চ এই রায় দেন। রায়ে বিচারিক আদালতের দেওয়া ২০ জনকে মৃত্যুদণ্ড এবং পাঁচজনের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড বহাল রেখেছেন হাইকোর্ট।

যাদের মৃত্যুদণ্ড বহাল রাখা হয়েছে তারা হলেন— মেহেদী হাসান রাসেল, মো. অনিক সরকার, মেহেদী হাসান রবিন, ইফতি মোশাররফ সকাল, মো. মনিরুজ্জামান মনির, মো. মেফতাহুল ইসলাম জিয়ন, মো. মাজেদুর রহমান মাজেদ, মো. মুজাহিদুর রহমান, খন্দকার তাবাককারুল ইসলাম তানভীর, হোসাইন মোহাম্মদ তোহা, মো. শামীম বিল্লাহ, এ এস এম নাজমুস সাদাত, মোর্শেদ অমর্ত্য ইসলাম, মুনতাসির আল জেমি, মো. শামসুল আরেফিন রাফাত, মো. মিজানুর রহমান, এস এম মাহমুদ সেতু, মোর্শেদ-উজ-জামান মণ্ডল জিসান, এহতেশামুল রাব্বি তানিম ও মুজতবা রাফিদ।

হাইকোর্ট যে পাঁচজনের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড বহাল রেখেছেন তারা হলেন— মুহতাসিম ফুয়াদ হোসেন, মো. আকাশ হোসেন, মুয়াজ আবু হুরায়রা, অমিত সাহা ও ইশতিয়াক আহমেদ মুন্না।

হাইকোর্টে এই মামলায় রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান, ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মো. জসিম সরকার, খন্দকার বাহার রুমি, নূর মুহাম্মদ আজমী, রাসেল আহম্মেদ এবং সহকারি অ্যাটর্নি জেনারেল আব্দুল জব্বার জুয়েল, লাবনী আক্তার, তানভীর প্রধান ও সুমাইয়া বিনতে আজিজ। আসামিপক্ষে শুনানিতে ছিলেন সিনিয়র আইনজীবী এস এম শাহজাহান, আজিজুর রহমান দুলু, মাসুদ হাসান চৌধুরী, মোহাম্মদ শিশির মনির।

২০১৯ সালের ৬ অক্টোবর দিবাগত রাতে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) শেরেবাংলা হলে ছাত্রলীগের একদল নেতা-কর্মীর বর্বরোচিত ও নির্মম নির্যাতনে নিহত হন আবরার ফাহাদ। বুয়েটের তড়িৎ ও ইলেকট্রনিক প্রকৌশল বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র ছিলেন আবরার।

এ হত্যাকাণ্ডে সারাদেশের ছাত্র সমাজ ফুঁসে ওঠে এবং বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষ ব্যাপক প্রতিবাদ ও প্রতিক্রিয়া প্রকাশ করে। আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংগঠন এ নির্মমতার বিরুদ্ধে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া জানায়।

২০২১ সালের ৮ ডিসেম্বর আবরার হত্যা মামলায় ২০ জনকে মৃত্যুদণ্ড ও পাঁচজনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেন ঢাকার আদালত। এরপর ২০২২ সালের ৬ জানুয়ারি আবরার হত্যা মামলায় মৃত্যুদণ্ড প্রাপ্তদের ডেথ রেফারেন্স হাইকোর্টে আসে। অন্যদিকে, আসামিরা রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করেন। একপর্যায়ে গত বছর ৭ অক্টোবর অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান সাংবাদিকদের জানান, এই মামলায় দ্রুত পেপারবুক তৈরি করে হাইকোর্টে আপিল শুনানির উদ্যোগ নেওয়া হবে। সেই ধারাবাহিকতায় হাইকোর্টে ডেথ রেফারেন্স ও আপিল শুনানি শুরু হয়। শুনানি শেষে গত ২৪ ফেব্রুয়ারি রায়ের জন্য বিষয়টি অপেক্ষমান রাখেন হাইকোর্ট।

আবরার ফাহাদ ১৯৯৮ সালের ১২ ফেব্রুয়ারি কুষ্টিয়ার কুমারখালীর রাধানগর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবা বরকত উল্লাহ ব্যাংকার। আর মা রোকেয়া খাতুন একজন গৃহিণী। কুষ্টিয়া মিশন প্রাথমিক বিদ্যালয়ে আবরার আনুষ্ঠানিক শিক্ষা শুরু করেন এবং পরে কুষ্টিয়া জিলা স্কুলে ভর্তি হন তিনি। সেখান থেকে কৃতিত্বের সাথে এসএসসি পাস করে ঢাকার নটরডেম কলেজে ভর্তির সুযোগ পেয়ে এইচএসসি কৃতিত্বের সাথে পাস করেন।

আবরার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এবং ঢাকা মেডিকেল কলেজসহ বেশ কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ পান। তার মায়ের ইচ্ছা ছিল ছেলে চিকিৎসাবিদ্যায় পড়ুক, তবুও আবরার ইঞ্জিনিয়ারিং বেছে নেন এবং বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট) এর ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং (ইইই) বিভাগে ভর্তি হন। তিনি বুয়েট এনার্জি ক্লাবসহ বেশ কয়েকটি ক্লাবের সঙ্গে জড়িত ছিলেন।

তুখোড় মেধাবী আবরার ছাত্রলীগের (বর্তমানে নিষিদ্ধ ঘোষিত) একদল নেতা-কর্মীর নির্মমতার বলি হন। সূত্র: বাসস

সর্বশেষ - ক্যাম্পাস