(দিনাজপুর টোয়েন্টিফোর ডটকম) অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা ড. এম সাখাওয়াত হোসেনকে তার পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হতে পারে। সোমবার দেওয়া একটি বক্তব্যের জেরে রাজনৈতিক দলের কয়েকজন নেতা তাকে উপদেষ্টা পরিষদ থেকে বাদ দেওয়ার দাবি জানান।
জবাবে প্রধান উপদেষ্টাসহ অন্যরা জানিয়েছেন, তারা বিষয়টি নিয়ে নিজেদের মধ্যে কথা বলবেন। কী করা যায় শিগগির দেখবেন। এ ছাড়া রাষ্ট্রীয় শোক দিবস না রাখার পক্ষে মত দিয়েছেন রাজনৈতিক দলের অনেক নেতা। এর কারণ হিসেবে তারা ব্যক্তি পূজার সংস্কৃতি পাল্টানোর আহ্বান জানান।
ছাত্র-জনতার প্রবল গণআন্দোলনের মধ্যে ক্ষমতার পালাবদলের পর নোবেলবিজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকার কাজ শুরু করেছে। দায়িত্ব নেওয়ার চতুর্থ দিনে প্রধান উপদেষ্টা রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে বৈঠক করেন। সোমবার বিকাল থেকে রাত পর্যন্ত রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় চলে এসব বৈঠক। অংশ নেয় বিএনপি-জামায়াতে ইসলামীসহ বিভিন্ন দলের নেতারা। বৈঠকে প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে ছিলেন আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল, শিল্প উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খান এবং মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা ফরিদা আখতার। পরে অন্য বৈঠকে যোগ দেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক যথাক্রমে উপদেষ্টা মো. নাহিদ ইসলাম ও আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া।
বৈঠক শেষে একাধিক নেতা উপদেষ্টা এম সাখাওয়াতের বিষয়টি নিশ্চিত করেন। পরে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা ফরিদা আখতার বলেন, আমরা তার (এম সাখাওয়াত) এমন বক্তব্য নিয়ে কনসার্ন (অবগত)। রাজনৈতিক নেতারা বিষয়টি বৈঠকে উত্থাপন করেছেন। ছাত্রনেতারা তার বক্তব্যে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন। তাকে অপসারণের দাবি জানান। আমরা আজ পরিষদের বৈঠকে এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেব।
সোমবার সচিবালয়ে সাবেক এ সেনা কর্মকর্তা গণআন্দোলনের মুখে ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগকে ‘গণ্ডগোল’ না পাকিয়ে দল গোছানোর পরামর্শ দেন। সেই সঙ্গে ভারতে পালিয়ে যাওয়া শেখ হাসিনাকে দেশে ফেরার পরামর্শ দিয়ে তিনি বলেন, ‘আপনি ভালো থাকেন, আবার আসেন। আমরা সবাই আপনাকে শ্রদ্ধা করি। কিন্তু গণ্ডগোল পাকানোর মানে হয় না, গণ্ডগোল পাকিয়ে তো লাভ হবে না। এতে লোকজন আরও ক্ষেপে উঠবে।’
তার এমন বক্তব্যের পরপর বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতারা প্রতিবাদ জানিয়েছেন। সমন্বয়ক হাসনাত আবদুল্লাহ গতকাল রাজু ভাস্কর্যের সামনে এক বিক্ষোভ সমাবেশে বলেন, অনেক উপদেষ্টাকে দেখছি খুনিদের পুনর্বাসনের পক্ষে বক্তব্য দিতে। উপদেষ্টাদের বক্তব্য দেওয়ার সময় ৫ আগস্টের গণভবন ও সংসদ ভবনের চিত্র মাথায় রাখতে হবে। স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার অপসারণের দাবিতে রাতে নয়াপল্টনে বিক্ষোভ মিছিল করেন বিএনপির অঙ্গসংগঠনের নেতারা।
প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠকে অংশ নেওয়া একজন নেতা বলেন, ড. সাখাওয়াতের বিষয়ে গুরুতর আপত্তি জানানো হয়েছে। তার একটি বক্তব্যে বিপ্লবী ছাত্র-জনতা ইতিমধ্যে ক্ষেপে গেছে। তাই তাকে সরিয়ে দেওয়া উচিত বলে আমরা মনে করি। তার বক্তব্যে ফ্যাসিবাদকে পুনর্বাসনের স্পষ্ট ইঙ্গিত রয়েছে।
আমার বাংলাদেশ (এবি পার্টি) পার্টির যুগ্ম সদস্যসচিব ব্যারিস্টার আসাদুজ্জামান ফুয়াদ বলেন, বৈঠকে এম সাখাওয়াতের বিষয়টি তোলেন গণঅধিকার পরিষদের সাধারণ সম্পাদক মুহাম্মদ রাশেদ খান। তারা স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার অপসারণ চেয়েছেন। জবাবে উপদেষ্টারা বিষয়টি আলোচনা করে দেখবেন বলে জানান।
তিনি বলেন, মূলত এ বিষয়টি নিয়েই বৈঠকে আলোচনা হয়েছে। ১৫ আগস্ট জাতীয় শোক দিবস ও সরকারি ছুটি থাকবে কি না, এ বিষয়ে আমরা সুনির্দিষ্ট মতামত দিয়েছি। রাষ্ট্রে এখন থেকে ব্যক্তিপূজা থাকা যাবে না। এ সংস্কৃতি দ্রুত বদল করতে হবে। ব্যক্তিপূজার বাইরে গিয়ে রাজনীতি করতে হবে। নির্বাচনের বিষয়ে অন্যদিন আলোচনা হবে। আমরা দলের পক্ষ থেকে ১১ দফা প্রস্তাব দিয়েছি।
পরে রাশেদ খান বলেন, এম সাখাওয়াতের বক্তব্য নিয়ে জনমনে বিভ্রান্তি তৈরি হয়েছে। আমরা দলের পক্ষ থেকে ১৪ দফা দাবি তুলে ধরেছি। রাষ্ট্রীয়ভাবে শোক দিবস না রাখার কথা বলেছি। যেহেতু নতুনভাবে রাষ্ট্র সংস্কার হচ্ছে তাই আগের বিষয় রাখা যাবে না। নতুনভাবে সংবিধানসহ সব বিষয় ঢেলে সাজাতে হবে। নির্বাচন আয়োজন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আমরা এ সরকারের কাছে একটি রাষ্ট্র সংস্কারের রোডম্যাপ চেয়েছি। তারা শিগগিরই এটি জাতির কাছে তুলে ধরবেন। সংখ্যালঘু নির্যাতনের সুষ্ঠু তদন্ত চেয়েছি।
এ বিষয়ে বক্তব্য জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা ড. এম সাখাওয়াত হোসেনকে পাওয়া যায়নি।
বৈঠক শেষে রাতে গণতন্ত্র মঞ্চের নেতা সাইফুল হক বলেন, গণহত্যাকারীদের পুনর্বাসেনর দায়িত্ব উপদেষ্টাদের নয়। দুয়েকজনের অতিকথন বন্ধ করতে হবে। এতে বিরূপ প্রতিক্রিয়া ফেলে। নীতিনির্ধারণী বিষয়ে প্রধান উপদেষ্টা কথা বলবেন। ১৫ আগস্ট নিয়ে আমাদের বক্তব্য এমন কিছু করা যাবে না যাতে উত্তেজনা তৈরি হয়। আওয়ামী লীগের অপকর্মের সঙ্গে বঙ্গবন্ধুকে মেলানো যাবে না।
তিনি জানান, প্রধান উপদেষ্টা সেপ্টেম্বরে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আবারও বৈঠক করবেন। সেখানে নির্বাচনসহ রাষ্ট্র সংস্কারের বিষয়ে আলোচনা হবে।
বৈঠক শেষে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সাংবাদিকদের বলেন, অন্তর্বর্তী সরকারের সব বিষয়ে বিএনপির সমর্থন রয়েছে। নির্বাচনের উপযুক্ত পরিবেশ তৈরি হতে যে সময় লাগবে তা বর্তমান সরকারকে দেওয়া হবে। সংখ্যালঘুদের ওপর হামলার ঘটনা প্রসঙ্গে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ছাত্র-জনতার অর্জনকে নস্যাৎ করতে নির্যাতনের গল্প বানানো হচ্ছে।
সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে মির্জা ফখরুল বলেন, নির্বাচন নিয়ে আমরা কথা বলিনি। আমরা আগেও বলেছি আপনারা জানেন, একটা নির্দিষ্ট সময় লাগবে নির্বাচনের জন্য উপযুক্ত পরিবেশ তৈরি করতে। আমরা তাদের সে সময় অবশ্যই দিয়েছি। বিএনপির ৯ সদস্যের দলে ছিলেন- স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন, জমির উদ্দিন সরকার, মির্জা আব্বাস, নজরুল ইসলাম খান, আবদুল মঈন খান, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, সেলিমা রহমান ও সালাহউদ্দিন আহমেদ। পরে গুলশানে দলের স্থায়ী কমিটির বৈঠকে বসে বিএনপি।
বিএনপির সঙ্গে বৈঠকের পর ৫টায় জামায়াতে ইসলামীর আমির শফিকুর রহমানের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধি দলের সঙ্গে বৈঠক করেন প্রধান উপদেষ্টা।বৈঠক শেষে বেরিয়ে জামায়াতের আমির শফিকুর রহমান বলেন, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সঙ্গে নির্বাচন নিয়ে কোনো কথা হয়নি। ওনারা কেবল বসলেন, মাত্র চারটা দিন হলো, আমরা দেখতে চাই ওনারা (অন্তর্বর্তী সরকার) কীভাবে জাতিকে নিয়ে এগোতে চাচ্ছেন। সমস্যাগুলোর সমাধান কীভাবে করেন। যৌক্তিক সময়ে সমাধান হবে বলে আমরা আশাবাদী। -নিউজ ডেস্ক