শনিবার , ৮ মার্চ ২০২৫ | ২৪শে ফাল্গুন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
  1. অন্যান্য
  2. আইন আদালত
  3. আর্ন্তজাতিক
  4. এক্সক্লুসিভ
  5. কৃষি ও কৃষাণ
  6. ক্যাম্পাস
  7. ক্রিকেট
  8. গল্প-সাহিত্য
  9. চাকুরি
  10. জাতীয়
  11. জেলার খবর
  12. টালিউড
  13. টেনিস
  14. তথ্য-প্রযুক্তি
  15. ধর্ম ও ইসলাম

‘ক্লিনচিট’ পাওয়া অনেকেই ফের দুদকের জালে

প্রতিবেদক
admin
মার্চ ৮, ২০২৫ ৮:২৬ অপরাহ্ণ

(দিনাজপুর টোয়েন্টিফোর ডটকম) আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে সরকারি দলের প্রভাবশালী অনেক মন্ত্রী, এমপি, ব্যবসায়ী ও সরকারি কর্মকর্তাকে দুর্নীতির অভিযোগ থেকে দায়মুক্তি দিয়ে তাদের বিরুদ্ধে যেসব তদন্ত ও অনুসন্ধান বন্ধ করা হয় এবং অভিযুক্তদের মামলা থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়, তা আবারও নতুন করে তদন্ত ও অনুসন্ধান শুরু করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। সূত্র জানায়, এখন আবার নতুন করে তাদের অনেকের বিরুদ্ধে অনুসন্ধানসহ মামলা হচ্ছে।

বিগত সরকারের দীর্ঘ ১৫ বছরের শাসনামলে নেতারা তাদের রাজনৈতিক ভাষণ ও বিভিন্ন ফোরামে দেওয়া বক্তব্যে দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্সের কথা বলতেন। কিন্তু বাস্তবে দলের বেশিরভাগ নেতাকর্মীই ছিলেন আকণ্ঠ দুর্নীতিতে নিমজ্জিত। বিশেষ করে সরকারে থাকা মন্ত্রী ও নির্বাচিত এমপি, সরকারি দলের বিভিন্ন স্তরের নেতা-কর্মী এবং তাদের পরিবার সদস্য ও স্বজনরা সরকারের নানা বরাদ্দে অনিয়মের পাশাপাশি বিভিন্ন প্রকল্পে যুক্ত হয়ে যথেচ্ছ দুর্নীতিতে জড়িয়ে পড়েন। সরকার-ঘনিষ্ঠ ব্যবসায়ীরাও এ ধরনের কাজে জড়িয়ে পড়েন। আর দীর্ঘদিন ক্ষমতায় থাকায় সরকারের বিভিন্ন বিভাগের কর্মকর্তারাও নানা ধরনের কাজ পাইয়ে দেওয়ার বিষয়ে সহযোগিতা করে শত শত কোটি টাকার দুর্নীতিতে জড়িয়ে পড়েন। সে সময়ে এসব দুর্নীতির তথ্য উদ্ঘাটনে স্বায়ত্তশাসিত সংস্থা হওয়ার পরেও দুদকের ভূমিকা ছিল বিতর্কিত ও প্রশ্নবিদ্ধ। বলা হয়ে থাকে, কর্তৃত্ববাদী সরকার প্রভাব বিস্তার করে শেকল পরানোয় স্বাধীন কোনো কাজ করতে পারেনি স্বায়ত্তশাসিত সংস্থাটি। ফলে সে সময়ে দুদকের কাজে ইচ্ছায়-অনিচ্ছায় যেমন নানা বাধার সৃষ্টি হয়েছিল, তেমনই প্রভাবশালীদের বলয়ে থেকে দুর্নীতিতে নিমজ্জিত হন সংস্থাটির অনেক কর্মকর্তা-কর্মচারীও। ফলে আওয়ামী লীগ শাসনামলে দুদক নিয়ে সব সময়েই ছিল তুমুল সমালোচনা।

এরপরেও দুদকের কাছে আওয়ামী লীগ সরকারের একাধিক মন্ত্রী, এমপি, নেতা, ব্যবসায়ী ও সরকারের কিছু কর্মকর্তার বিরুদ্ধে প্রচুর অভিযোগ জমা পড়ে। এগুলোর কিছু অভিযোগ নিয়ে লোক দেখানো অনুসন্ধান, তদন্ত ও মামলা দায়ের করেছিল দুদক। তবে অভিযোগ রয়েছে, এমন বেশিরভাগ মামলাতেই অভিযুক্তরা চাপ প্রয়োগ, ভয় দেখানো কিংবা দুদক কর্মকর্তাদের সঙ্গে নানা রকম যোগসাজশ করে রেহাই পেয়ে যান। তারা প্রকাশ্যে নিজেদের নির্দোষ দাবি করেন। অনিয়মে ভরা সেসব তদন্তের শেষে দুদক থেকে তাদের ‘ক্লিনচিট’ বা অনুসন্ধান, তদন্ত ও মামলা থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছিল। এ নিয়ে অবশ্য সংস্থাটি বেশ সমালোচিত হয়। এ জন্য দুদকের কার্যক্রম নিয়ে নানা প্রশ্ন ওঠে বিগত কমিশনগুলোর আমলে।

গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে আওয়ামী সরকারের পতনের পর দুদক বেশ সক্রিয় হয়ে ওঠে। নতুন করে সংস্কার কমিশন গঠনের মধ্য দিয়ে সংস্থাটির কার্যকর ভূমিকা ইতিবাচক হিসেবেই দেখছেন অনেকে।

একসময় অবৈধ আর রাজনৈতিক প্রভাব বিস্তার করে যারা নিজেদের ‘ক্লিনচিট’ নেয় এবং দায়মুক্তি দেওয়া হয় ‘নতুন পরিস্থিতিতে’ দেখা যাচ্ছে তারা আবারও দুদকের জালে ধরে পড়ছেন। পরিবর্তিত এই সময়ে এসে তাদের বিরুদ্ধে নতুন করে অভিযোগ গঠনসহ অনুসন্ধান করে মামলাও হচ্ছে।

দুদকের একাধিক সূত্রে জানা গেছে, তখনকার সময়ে অনেক প্রভাবশালী ব্যক্তির বিরুদ্ধে দুদকের অনুসন্ধানে দুর্নীতির সত্যতা পাওয়ার পর মামলা হলেও তদন্তের পর ফাইনাল রিপোর্ট ট্রু (এফআরটি)-এর মাধ্যমে তাদের দায়মুক্তি দেওয়া হয়েছিল।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, গত ১৫-১৬ বছরে প্রায় তিন হাজার ব্যক্তিকে দায়মুক্তি দিয়েছিল দুদক। তাদের মধ্যে পতিত সরকারের সাবেক মন্ত্রী-এমপি, সরকারি কর্মকর্তা, পুলিশ, ব্যাংকারসহ ব্যবসায়ীরা ছিলেন।

তথ্যমতে, সবচেয়ে বেশি দায়মুক্তির ঘটনা ঘটেছে ইকবাল মাহমুদ কমিশনের সময়ে। তার সময়ে অবৈধ লেনদেনের মাধ্যমে ‘ক্লিনচিট’ দেওয়া হতো বলে জানা যায়।

দেশের ব্যাংকিং সেক্টরে দুর্নীতির সবচেয়ে আলোচিত ঘটনা বেসিক ব্যাংক কেলেঙ্কারি। গত কয়েক বছর ধরে বেসিক ব্যাংকের অনিয়ম-দুর্নীতির সংবাদ গণমাধ্যমে শিরোনাম হয়েছে। ২০২৩ সালের ১২ জুন বেসিক ব্যাংকের আলোচিত সাবেক চেয়ারম্যান আবদুল হাই বাচ্চুসহ ১৪৭ জনের বিরুদ্ধে চার্জশিট অনুমোদন দেয় দুদক। সংস্থাটির দায়ের করা মোট ৫৯ মামলার চার্জশিটের মধ্যে ৫৮টি মামলার তদন্তে নতুন আসামি হিসেবে আব্দুল হাই বাচ্চু ও কোম্পানি সচিব শাহ আলম ভূঁইয়াকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। অথচ ২০১৫ সালে দায়ের করা কোনো মামলাতেই বাচ্চুকে আসামি করা হয়নি। যে কারণে দুদককে বারবার বিভিন্ন প্রশ্নের মুখেও পড়তে হয়েছে।

পরিবর্তিত সময়ে এসে অবশেষে গত ৯ ফেব্রুয়ারি ২৪৮ কোটি টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জন ও অর্থপাচারের অভিযোগে বেসিক ব্যাংক লিমিটেডের আলোচিত সাবেক চেয়ারম্যান শেখ আব্দুল হাই বাচ্চু ও তার পরিবারের বিরুদ্ধে ৪ মামলা দায়ের করেছে দুদক। মামলায় অবৈধ সম্পদ অর্জনের পাশাপাশি ৫৮ কোটি টাকা কানাডায় পাচারের অভিযোগ আনা হয়েছে। পৃথক চারটি মামলায় শেখ আব্দুল হাই বাচ্চুর সঙ্গে তার স্ত্রী মিসেস শিরিন আকতার, ছেলে শেখ ছাবিদ হাই অনিক এবং তার মেয়ে শেখ রাফা হাইকে আসামি করা হয়েছে বলে জানায় দুদক।

ঢাকা ওয়াসার বহুল আলোচিত-সমালোচিত সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক তাকসিম এ খান। ২০২৩ সালের এপ্রিলে তার বিরুদ্ধে মামলা দায়েরের সুপারিশ সংবলিত অনুসন্ধান প্রতিবেদন কমিশনে জমা দেওয়া হলেও সে বিষয়ে কোনো অগ্রগতি হয়নি। গত ৮ জানুয়ারি ক্ষমতার অপব্যবহারের মাধ্যমে জনবল কাঠামোবহির্ভূত নিয়োগ দিয়ে দুর্নীতি করার অভিযোগে ঢাকা ওয়াসার পরিচালনা পর্ষদের সাবেক চেয়ারম্যান মো. হাবিবুর রহমান, সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) প্রকৌশলী তাকসিম এ খানসহ বোর্ডের ১০ জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছে দুদক।

মামলার এজাহারে বলা হয়েছে, ওয়াসার সাবেক পরিচালক আবুল কাশেম ও এ কে এম সহিদ উদ্দিনের নিয়োগ প্রস্তাবের সঙ্গে একমত পোষণ করেন আসামিরা। পাশাপাশি তাদের বেতন-ভাতা বাবদ উত্তোলিত ১ কোটি ৯৮ লাখ ৬৫ হাজার ৯৮০ টাকা আত্মসাতের সহযোগিতা করেছেন।

২০০৯ সালে ঢাকা ওয়াসার এমডি হিসেবে নিয়োগ পান প্রকৌশলী তাকসিম এ খান। এরপর কয়েক ধাপে মেয়াদ বাড়ে তার। আওয়ামী লীগ সরকারের পতন পর্যন্ত ওই পদে বহাল ছিলেন তিনি। সরকার পতনের পর ঢাকা ওয়াসার কর্মকর্তা-কর্মচারীদের একটি অংশ তাকসিম এ খানসহ কয়েকজন কর্মকর্তার ওয়াসা ভবনে প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা দেয়। সে কারণে তারা ওয়াসা ভবনে যাচ্ছিলেন না। পরে গত বছরের ১৪ আগস্ট তিনি স্থানীয় সরকার বিভাগের সচিবের কাছে পদত্যাগপত্র দেন।

এক সময় জাতীয় সংসদের সাবেক হুইপ ও চট্টগ্রাম-১২ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য শামসুল হক চৌধুরীর বিরুদ্ধেও দুদকে অভিযোগ ছিল। ক্যাসিনোকাণ্ড থেকে শুরু করে সরকারের শুদ্ধি অভিযান- সব জায়গায় নাম আসে এই হুইপের। ২০১৯ সালের ক্যাসিনো অভিযানের পর ওই বছরের ২৩ অক্টোবর মানি লন্ডারিংয়ের মাধ্যমে বিদেশে অর্থপাচারের অভিযোগ এনে এমপি সামশুল হক চৌধুরীসহ ২২ জনের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা দিতে এসবির বিশেষ পুলিশ সুপার (ইমিগ্রেশন) বরাবর চিঠি পাঠায় দুদক। নানা কারণে ওই সময়ের সকল অভিযোগ সুষ্ঠু তদন্তের মুখ দেখেনি বলে জানা যায়। অবশেষে গত বছরের ২৩ ডিসেম্বর সামশুল হক চৌধুরী ও তার পরিবারের সদস্যদের ব্যাংক হিসাব তলবের কথা জানিয়েছে দুদক। তার বিরুদ্ধে বিভিন্ন অনিয়ম ও দুর্নীতির তদন্ত নতুন করে সংস্থাটি করছে বলেও জানা গেছে।

দিলীপ কুমার আগরওয়ালা ডায়মন্ড ওয়ার্ল্ডের কর্ণধার। নানা অপকর্ম আর সোনা চোরাচালানের মূল হোতা হিসেবে যার নাম উঠে এসেছে একাধিকবার। দুর্নীতি দমন কমিশনে তার বিরুদ্ধে অবৈধ সম্পদ অর্জনসহ নানা অভিযোগ পড়ে। কিন্তু ক্ষমতা আর অর্থের প্রভাবে দুদককে ফাঁকি দিয়ে পেয়ে যান ক্লিন সার্টিফিকেট। তবে এবার নতুন করে আবার অনুসন্ধান হচ্ছে এই ব্যবসায়ীর।

জানা গেছে, ২০২০ সালের ২৩ নভেম্বর অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগসহ বিভিন্ন অভিযোগ থেকে দিলীপ কুমার আগারওয়ালকে অব্যাহতি দেয় দুদক। দীর্ঘ প্রায় তিন বছর তদন্ত শেষে আগারওয়ালকে দায়মুক্তি দেয়া হয় তখন।

দুদক সূত্রে জানা যায়, ২০১৭ সালের ১০ অক্টোবর দিলীপ কুমার আগারওয়ালের বিরুদ্ধে সংস্থাটির প্রধান কার্যালয়ে একটি অভিযোগ জমা পড়ে। এতে অভিযোগ ছিল, স্বর্ণ ও হীরা চোরাচালানের মাধ্যমে দিলীপ আগারওয়াল রাজস্ব ফাঁকিসহ শত শত কোটি টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জন করেছেন।

গত বছরের ৩ সেপ্টেম্বর মধ্যরাতে রাজধানীর গুলশান থেকে দিলীপ কুমার আগরওয়ালাকে গ্রেপ্তার করেছে র‌্যাব-১-এর একটি দল। বর্তমানে তিনি কারাগারে রয়েছেন।

ভোলা-৪ আসনের সাবেক এমপি আব্দুল্লাহ আল জ্যাকব। তার বিরুদ্ধে ২০১৯ সালের জানুয়ারিতে দুদকে অভিযোগ জমা হয়। অভিযোগ অনুসন্ধান শেষে ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারিতে তাকে অব্যাহতি দেওয়া হয়। জানা গেছে, গত বছরের এপ্রিল ও মে মাসে আরও দুটি অভিযোগ জমা হয় দুদকে। বর্তমানে অভিযোগ যাচাই-বাছাই পর্যায়ে আছে বলে জানা গেছে।

এদিকে আওয়ামী সরকার পতনে পর গত বছরের ১ অক্টোবর জ্যাকবকে গুলশান এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। ২০১২ সালে বিএনপির মিছিলে নেতা-কর্মীদের ওপর গুলি করে হত্যাচেষ্টার অভিযোগে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ জ্যাকবের বিরুদ্ধে গত বছরের ১২ সেপ্টেম্বর ঢাকার জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট এস এম সাইফুল ইসলামের আদালতে মামলার আবেদন করেন ভোলা-৪ আসনের সাবেক এমপি নাজিম উদ্দিন আলম। সেই মামলায় জ্যাকবকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে। এ ছাড়া চলতি বছরের ১৪ জানুয়ারি জ্যাকব এবং তার স্ত্রী নীলিমা নিগার সুলতানা, মেয়ে জুল জালালে আল ইসলাম জেনিক ও ছেলে আবরার তপন ইসলাম জেনিলের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছেন আদালত। দুদকের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ঢাকার মেট্রোপলিটন সিনিয়র স্পেশাল জজ জাকির হোসেন গালিব এ আদেশ দেন বলে জানা যায়।

একসময় নানা অনিয়ম আর দুর্নীতির অভিযোগে ভোলা-৩ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য নুরুন্নবী চৌধুরী শাওনের বিরুদ্ধে দুদকে মামলা হয়েছিল। সেই মামলা থেকে রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে অব্যাহতি নিয়ে নেয় বলে জানা যায়। তবে পরিবর্তিত সময়ে এসে আবারও দুদকের জালে ধরা পড়েছেন তিনি। গত ২৮ জানুয়ারি শাওন ও তার স্ত্রী ফারজানা চৌধুরীর বিরুদ্ধে মামলা করেছে দুদক। মামলায় শাওনের বিরুদ্ধে ৫১ কোটি ৯ লাখ টাকার জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগ আনা হয়েছে। আর তার নামে থাকা ৩৩টি ব্যাংক হিসাবে ২০৮ কোটি ৭০ লাখ ৭৯ হাজার ৪২৩ টাকার সন্দেহজনক লেনদেন হয়েছে। শাওনের স্ত্রী ফারজানা চৌধুরীর বিরুদ্ধে ২ কোটি ২০ লাখ ৬১ হাজার টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ আনা হয়েছে।

জানা গেছে, পরপর চারবার দুদকের ‘ক্লিনচিট’ নিয়েছিলেন ছাগলকাণ্ডে আলোচিত এনবিআরের সাবেক সদস্য মতিউর রহমান। প্রভাবশালী এই সরকারি কর্মকর্তার বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ পেয়ে চার দফা অনুসন্ধান দল গঠন করে দুদক। প্রতিবারই তার বিরুদ্ধে দুর্নীতির সত্যতা মেলেনি বলে তাকে অব্যাহতি দিয়ে অভিযোগ নথিভুক্ত করা হয় বলে অভিযোগ রয়েছে। অবশেষে চলতি বছরের ৬ জানুয়ারি অবৈধ সম্পদ অর্জন ও সম্পদের তথ্য গোপনের অভিযোগে মতিউর রহমান, লায়লা কানিজ, তাঁদের ছেলে তৌফিকুর রহমান ও মেয়ে ফারজানা রহমানের বিরুদ্ধে পৃথক মামলা করেছে দুদক। এর আগে গত বছরের ১৫ ডিসেম্বর মতিউর ও তাঁর দ্বিতীয় স্ত্রী শাম্মী আখতার শিবলীর বিরুদ্ধে পৃথক দুটি মামলা করে দুদক।

এদিকে এক কমিশনের আমলে অব্যাহতি নেওয়া এবং আরেক কমিশনের সময়ে একই ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে পুনঃতদন্ত হওয়া নিয়ে সংশ্লিষ্ট অনেকে মিশ্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন। একই ব্যক্তিকে একবার ‘ক্লিনচিট’ দেয়ার পর আবার অনুসন্ধানে কিভাবে কোটি কোটি টাকার অবৈধ সম্পদ খুঁজে পান, তা উদ্ঘাটন করে জড়িতদের কঠোর শাস্তির ব্যবস্থা করা উচিত বলে অনেকে অভিমত দেন।

এ বিষয়ে দুদকের মহাপরিচালক (প্রতিরোধ) মো. আক্তার হোসেন বলেন, ‘বর্তমান কমিশনের সময়ে কোনো অভিযুক্ত সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি বা দুর্নীতিবাজকে কোনো অভিযোগ থেকে দায়মুক্তি দেখিয়ে ক্লিন সার্টিফিকেট দেওয়া হয় না।’

তিনি আরও বলেন, ‘কোনো অভিযোগ একবার পরিসমাপ্তি হয়ে থাকলে পরবর্তী সময়ে যদি ওই অভিযোগ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির বিরুদ্ধে আরও তথ্য প্রমাণাধি পাওয়া যায় এবং প্রথমবার তার বিরুদ্ধে অভিযোগ পরিসমাপ্তি হয়ে যাওয়ার পরও তিনি যদি অবৈধ সম্পদ বা কোনো দুর্নীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত হয়ে থাকেন তাহলে তার বিরুদ্ধে পুনরায় অনুসন্ধানের ক্ষেত্রে কোনো বাধা নেই।’

দুদকের জাল থেকে আরও যারা পেয়েছিলেন অব্যাহতি

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, আগেকার কমিশনের আমলে দুর্নীতির প্রমাণ পেয়ে মামলা দায়ের করার পরও পেট্রোবাংলার সাবেক চেয়ারম্যান হোসেন মনসুরকে দায়মুক্তি দিয়েছিল। এভাবে প্রবাসীকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সাবেক সচিব ড. খোন্দকার শওকত হোসেন, আনন্দ শিপইয়ার্ডের মালিক আব্দুল্লাহিল বারী, রাজউকের সাবেক চেয়ারম্যান নূরুল হুদা, আলোচিত কাস্টমস কমিশনার নূরুল ইসলাম, সিভিল এভিয়েশনের প্রধান প্রকৌশলী শুভেন্দু গোস্বামী, বাপেক্সের ব্যবস্থাপনা পরিচালক নওশাদুল ইসলাম, যুগ্মসচিব মো. আবুল হাসনাত হুমায়ন কবির, এলজিইডির সাবেক প্রধান প্রকৌশলী খলিলুর রহমান, জনস্বাস্থ্যের নির্বাহী প্রকৌশলী নূরুল কবির ভূঁইয়া, সওজের নির্বাহী প্রকৌশলী সেলিম আজাদ খান, শাহরিয়ার শরিফ খান, রাজউকের নির্বাহী প্রকৌশলী সাইদুর রহমান, মো. সিরাজুল ইসলাম, ঢাকা ওয়াসার প্রকল্প পরিচালক প্রকৌশলী মো. নূরুল ইসলাম, প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের প্রকল্প পরিচালক বেলাল হোসেন, পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের সাবেক মহাপরিচালক কাজী মোস্তফা সারওয়ার, কাস্টমস কমিশনার ড. মো. শহিদুল ইসলাম, উপপ্রধান বন সংরক্ষক মো. শফিউল আলম চৌধুরী, বিডিবিএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মঞ্জুর আহমেদ, গোয়াইনঘাটের সাবরেজিস্ট্রার স্বপ্না বেগম, স্বাস্থ্য শিক্ষা কর্মকর্তা মো. নাসির উদ্দিন, গণপূর্তের হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা একেএম মজিবুর রহমান ও সিটি ব্যাংকের উপব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. ওয়াদুদ।

অনুসন্ধানে আরও জানা গেছে, পতিত সরকারের আমলে নারায়ণগঞ্জ-২ আসনের সাবেক সংসদ-সদস্য নজরুল ইসলাম বাবুর বিরুদ্ধে তিন দফা দুর্নীতির অভিযোগ অনুসন্ধানে টিম গঠন করে দুদক। মালয়েশিয়ায় সেকেন্ড হোম করে তার অন্তত ৫০০ কোটি টাকা বিনিয়োগ এবং দেশে-বিদেশে বিপুল সম্পদের তথ্য গণমাধ্যমেও প্রকাশিত হয়। কিন্তু প্রতিবারই অভিযোগের নথি লম্বা সময় ফেলে রাখা হয়। এরপর রহস্যজনকভাবে তার বিরুদ্ধে অভিযোগের সত্যতা পাওয়া যায়নি মর্মে অভিযোগ নথিভুক্ত করে তাকে ক্লিনচিট দেওয়া হয়। ২০১৯ সাল থেকে অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ অনুসন্ধান করে আসছিল দুদক। অনুসন্ধানে দুদক নজরুল ইসলাম বাবু ও তাঁর পরিবারের বিপুল স্থাবর-অস্থাবর সম্পদের তথ্য পায়, যা তাঁর বৈধ আয়ের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ নয় বলে সূত্র নিশ্চিত করেছে।

জানা গেছে, কিশোরগঞ্জ-৫ আসনের সাবেক সংসদ-সদস্য আফজাল হোসেন, শেরপুর-১ আসনের সাবেক সংসদ-সদস্য আতিউর রহমান আতিক, চট্টগ্রাম-৩ আসনের সাবেক সংসদ-সদস্য মাহফুজুর রহমান মিতা, সাবেক সংসদ-সদস্য বিএম মোজাম্মেল হক এবং সিরাজুল ইসলাম মোল্লাকে দুর্নীতির অভিযোগ থেকে দায়মুক্তি দিয়েছিল দুদক।

দুদক সূত্রে জানা গেছে, গত বছরের ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে আওয়ামী সরকারের পতনের পর একবার ক্লিন সার্টিফেকেট নেওয়া বা অব্যাহতিপ্রাপ্তরা আবারও দুদকের অনুসন্ধানে পড়ছেন। পুনরায় তদন্ত করে তাদের বিরুদ্ধে দুদক অনুসন্ধান চালানোর পাশাপাশি মামলা দায়ের করার কথা জানা যায়। – নিউজ ডেস্ক

সর্বশেষ - ক্যাম্পাস