রবিবার , ২৮ এপ্রিল ২০২৪ | ৬ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
  1. অন্যান্য
  2. আইন আদালত
  3. আর্ন্তজাতিক
  4. এক্সক্লুসিভ
  5. কৃষি ও কৃষাণ
  6. ক্যাম্পাস
  7. ক্রিকেট
  8. গল্প-সাহিত্য
  9. চাকুরি
  10. জাতীয়
  11. জেলার খবর
  12. টালিউড
  13. টেনিস
  14. তথ্য-প্রযুক্তি
  15. ধর্ম ও ইসলাম

বিসিএসে কেন এত আগ্রহ চাকরিপ্রত্যাশীদের?

প্রতিবেদক
admin
এপ্রিল ২৮, ২০২৪ ৫:৫২ অপরাহ্ণ

(দিনাজপুর টোয়েন্টিফোর ডটকম) দেশে স্নাতক তরুণদের মধ্যে এখন বিসিএস কর্মকর্তা হওয়া রীতিমতো স্বপ্নে পরিণত হয়েছে। গত শুক্রবার (২৬ এপ্রিল) সিভিল সার্ভিসের(বিসিএস) প্রিলিমিনারি পরীক্ষায় যথাসময়ে হাজির না হওয়ায় অংশগ্রহণে ব্যর্থ হয়ে এক তরুণ রাস্তায় গড়াগড়ি দিয়ে রীতিমতো কান্নাকাটি করেছেন। একই রকম আরও কয়েকজন তরুণ পরীক্ষায় বসতে না পেরে ক্ষোভ আর হতাশা প্রকাশ করেছেন।

প্রথম শ্রেণির এই গেজেটেড সরকারি চাকরির মধ্যে আবার সবচেয়ে পছন্দের প্রশাসন এবং পুলিশের চাকরি। যারা এ বছর এবং এর আগে বিসিএস দিয়েছেন তাদের সঙ্গে কথা বলে এই শীর্ষ পছন্দের কয়েকটি কারণ জানা গেছে।

তার মধ্যে রয়েছে- ১. নিরাপত্তা ২. ভালো বেতন ও সুযোগ সুবিধা ৩. ক্ষমতা ৪. সামাজিক মর্যাদা ৫. বাড়তি উপার্জনের সুযোগ। পুরুষেরা আরও একটা কারণ বলেছেন। আর তা হলো, বিয়ের বাজারে এখন বিসিএস কর্মকর্তার চাহিদা সবচেয়ে বেশি পাত্রীপক্ষের কাছে।

গত শুক্রবার ৪৬তম বিসিএসের প্রিলিমিনারি পরীক্ষা হয়েছে। এই পরীক্ষায় অংশ নিয়েছেন তিন লাখ ৩৮ হাজার। এই বিসিএসে বিভিন্ন ক্যাডারে মোট পদ তিন হাজার ১৪০টি। তবে সবচয়ে বেশি নেওয়া হবে স্বাস্থ্য ক্যাডারে।

বিসিএস চাকরিপ্রত্যাশীরা যা বলেন

এবার বিসিএস প্রিলিমিনারি পরীক্ষায় অংশ নেওয়া ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অনার্স পাস করা রেজাউল করিম বলেন, ‘এখন আমাদের জেনারেশন বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়েই বিসিএসের প্রস্তুতি নেওয়া শুরু করে। কারণ আমাদের সামনে এই চাকরিটাকেই বড় করে দেখানো হয়। আমরা এইভাবেই জানছি। আমাদের বিষয়ভিত্তিক পড়ানা শুধু পাস করার জন্য। মূল পড়াশোনা বিসিএস চাকরির জন্য।’

তার মতে, ‘প্রশাসন ক্যাডারে চাকরি পেলে ভালো বেতন আছে। ক্ষমতা আছে। সামাজিক মর্যাদা আছে। আছে বেতনের বাইরে আয়ের সুযোগ। বেসরকারি চাকরিতে সেটা নেই।’

রেজাউল বলেন, ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় লাইব্রেরিতে এখন শিক্ষার্থীরা ব্যাপক পড়াশোনা করেন। কিন্তু কেউ নিজের বিষয় নিয়ে পড়ে না। পড়ে বিসিএস গাইড। আমাদের পড়াশোনা আসলে এখন বিসিএস পড়াশোনা।

৪৫তম বিসিএসে অংশ নেওয়া মো. মানিক হোসেন রিপন বলেন, ‘বেসরকারি চাকরিতে নিরাপত্তা নাই। যেকোনো সময় চাকরি চলে যেতে পারে। আমরা করোনার সময় দেখেছি, অনেক বেসরকারি চাকরিজীবীর চাকরি চলে গেছে। সবচেয়ে বড় কথা, সরকারি চাকরিতে অর্থ আছে। ক্ষমতা আছে। মর্যাদা আছে। প্রশাসন ক্যাডার হলে তো কথাই নেই। আর এখন বিয়ের বাজারে সরকারি চাকরির কদর। বিসিএস ক্যাডার বরের চাহিদা এখন শীর্ষে। বিসিএস জব হলে পছন্দমতো বিয়ে করা যায়।’

তার কথায়, ‘বিসিএস অফিসারের যে ক্ষমতাতাতে চাইলে যে অনেক ভালো কাজ করতে পারে। খারাপ কাজও করতে পারে। বেতনের বাইরে অনেক টাকা পয়সা আয়ের সুযোগ আছে।’

এবারে বিসিএস পরীক্ষায় অংশ নেওয়া আরেকজন আরিফ হোসেন বলেন, ‘আসলে এখানে ক্ষমতা এবং সামজিক মর্যাদাই মূল। বাংলাদেশে বিসিএসের বাইরে অন্য পেশায় এটা নেই। আর পাত্রীপক্ষও আগে খোঁজেন বিসিএস পাত্র। বিসিএস না হলে সরকারি চাকরি করে এমন পাত্র। বেসরকারি চাকরিজীবী বা ফ্রিল্যান্সিং করে কেউ মাসে তিন লাখ টাকা আয় করলেও সমাজে তার গুরুত্ব নেই।’

আরিফ বলেন, ‘আমরা তো দেখছি ইউএনও, এসপি, ডিসিদের ক্ষমতা। আমরা তো জানি তাদের কত সুযোগ সুবিধা। তাহলে আমরা সেটা হতে চাইব না কেন? আর আমাদের পরিবার, বড় ভাই সবাই বিসিএসের কথা বলেন। আমাদের কাছে তাদের একটাই চাওয়া বিসিএস অফিসার হওয়া।’

তাদের কথায়, ‘সবাই মিলে বিসিএস জবকে গ্লোরিফাই করেছে। সংবামাধ্যমও বড় করে ছাপে, প্রচার করে বিসিএসে কোন ক্যাডারে কে প্রথম হয়েছে। কোন ছেলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হয়েছে তা তো ছাপে না।’

কেন এই পরিস্থিতি?

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের সহযোগী অধ্যাপক মোহাম্মদ মজিবুর রহমান বলেন, ‘আমাদের এখানে শিক্ষা অনেক আগেই তার মূল উদ্দেশ্যের বাইরে চলে গেছে। শিক্ষা হচ্ছে চাকরির জন্য। আর এই সময়ে বিসিএস চাকরির জন্য। আমাদের এখানে এখন আর জ্ঞানভিত্তিক সমাজ নেই। হয়ে গেছে পেশিভিত্তিক সমাজ। আর সেটা হলো ক্ষমতা। বিসিএস চাকরি হলো একটা ক্ষমতা। আর প্রশাসন ক্যাডার হলো সবচেয়ে বড় ক্ষমতা। তাই তরুণরা সেদিকে যেতেই চেষ্টা করছে।’

তার কথায়, ‘রাষ্ট্র কী চায় সেটাও দেখতে হবে। সরকার এখন এক হাজার ৮৩৩ কোটি টাকা খরচ করে প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণের জন্য অ্যাকাডেমি তৈরি করছে। যার আদৌ প্রয়োজন নাই। এই প্রশিক্ষণের কাজ বিশ্ববিদ্যালয়গুলোই করতে পারে। ওই টাকা শিক্ষার উন্নয়নে, গবেষণায় কাজে লাগানো যেত।’

তার মতে, ‘এখন রাষ্ট্র হয়ে যাচ্ছে ক্যাডারনির্ভর। এখানে জ্ঞানী মানুষ, গবেষক, বিজ্ঞানী গৌণ হয়ে পড়ছে। এর এক ভয়াবহ পরিণতি আমাদের দেখতে হবে।’

BCS2
বিসিএস এখন তরুণ-তরুণীদের কাছে স্বপ্নের চাকরি। ছবি: সংগৃহীত

‘তবে প্রশাসনেও মেধাবীদের দরকার আছে। কিন্তু এখন যেটা হচ্ছে তা হলো ক্ষমতা। আর ক্ষমতা হলে আসে অর্থ। তরুণদের তাই শেখানো হচ্ছে। তারা ইউএনও হবেন, এসপি হবেন, ডিসি হবেন। সবাই তাদের স্যার বলবে। তাদের সবাই ভয় পাবে। তারা যা কিছু চান করতে পারবেন। এটাই তাদের আদর্শ হয়ে গেছে।’

বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় জব সাইট বিডিজবডটকম-এর প্রধান নির্বাহী ফাহিম মাশরুর বলেন, ‘আসলে ২০১৫ সালের পে-স্কেলে সরকারি চাকরির বেতন প্রায় দুই গুণ হয়ে গেছে। এছাড়া তাদের আরও অনেক সুযোগ-সুবিধা আছে। কিন্তু বেসরকারি খাতে সেরকম বেতন বাড়েনি। সরকার চাইলে আজকেই সরকারি চাকরির বেতন বাড়িয়ে দিতে পারে। কারণ সাধারণ মানুষের ট্যাক্সের পয়সায় সরকার বেতন দেয়। ট্যাক্স বাড়িয়ে দেবে। কিন্তু বেসরকারি খাতে সেই সুযোগ নাই। এছাড়া সরকারি চাকরিতে অবৈধ উপার্জনের সুযোগ আছে।’

তার কথা, ‘আগে নিম্ন-মধ্যবিত্ত এবং মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তানরা সরকারি চাকরি করতেন। এখন উচ্চবিত্তের সন্তানরাও বিসিএস জবে ঢুকছেন। কারণ তারা চিন্তা করছেন ক্ষমতা। এখন সরকারি চাকরি একটা ক্ষমতার প্রতীকে পরিণত হয়েছে।’

‘বেসরকারি খাতে মেধাবীদের সংখ্যা কমছে। এটা এই খাতের জন্য খারাপ খবর,’ বলেন তিনি।

বিসিএস ক্যাডারের মধ্যেও আবার বৈষম্য আছে। ফলে বিসিএস শিক্ষা ক্যাডারের প্রতি তরুণদের আগ্রহ নেই। তারা বিসিএস দিয়ে সরকারি কলেজের শিক্ষক হতে চান না। আবার  ডাক্তারি, ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ে ওই ক্যাডারে না গিয়ে প্রশাসন ক্যাডারে যেতে চান তরুণরা। একই বেতন তারপরও কেন প্রশাসন ক্যাডার?

বাংলাদেশ সরকারি কর্মকমিশনের সদস্য অধ্যাপক সৈয়দ মোহাম্মদ গোলাম ফারুক বলেন, ‘বিসিএস চাকরির প্রতি তরুণদের আগ্রহ বাড়ার একটি কারণ হতে পারে যে, তারা মনে করে এখানে যোগ্যতা থাকলে পরীক্ষা দিয়ে চাকরি পাওয়া যায়। কোনো তদবির বা অন্য কোনো পথ ধরতে হয় না। তবে আরো অনেক কারণ আছে।’

তার মতে, ‘করোনার সময় অনেক বেসরকারি চাকরিজীবী চাকরি হারিয়েছেন। কিন্তু সরকারি চাকরিজীবীরা ভালো ছিলেন। এখন সরকারি চাকরিতে বেতন ও সুযোগ সুবিধা ভালো। তবে এই কয়েক লাখ যে পরীক্ষা দেন এর কারণ একজন চাকরি প্রার্থী বয়স থাকা পর্যন্ত বার বার বিসিএস পরীক্ষা দিতে পারেন।’

আবার সরকারি অন্য চাকরি বা বেসরকারি চাকরিতে থেকে কেউ কেউ বয়স থাকা পর্যন্ত বার বার বিসিএস দেন। শেষ পর্যন্ত চেষ্টা করেন। সম্প্রতি বাংলাদেশ ব্যাংকের মতো প্রতিষ্ঠানের ৫৭ জন সহাকারী এবং উপপরিচালক চাকরি ছেড়েছেন। কারণ তারা বিসিএস কর্মকর্তা হতে পেরেছেন শেষ পর্যন্ত।

এক প্রশ্নের জবাবে অধ্যাপক সৈয়দ মোহাম্মদ গোলাম ফারুক বলেন, ‘শিক্ষা গবেষণার প্রতি তরুণদের আগ্রহ কমছে। তারা তাদের বিষয়ভিত্তিক চাকরির প্রতিও আগ্রহী নয়। আমরা দেখেছি যারা বিসিএস দেন তাদের সর্বশেষ পছন্দ হলো শিক্ষা ক্যাডার। এর কারণ আমাদের এখানে ক্যাডার বৈষম্য আছে।’

একই বেতন হওয়ার পরও একজন কেন শিক্ষা ক্যাডারে লেকচারার না হয়ে সহকারী সচিব হতে চান? এর কারণ কী? এই প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘ওই যে ক্ষমতা। একজন ইউএনও হলেই গাড়ি পান। নানা সুবিধা পান। কিন্তু একজন তো কলেজের প্রিন্সিপাল হলেও গাড়ি পান না। একজন প্রফেসর শিক্ষা ক্যাডারের সর্বোচ্চ পদ। কিন্তু তিনি তো থার্ড গ্রেডের। কিন্তু প্রশাসনের একজন সচিব প্রথম গ্রেডের।’ -ডয়চে ভেলে

সর্বশেষ - রাজনীতি